রবিবার, ৯ জুন, ২০১৩

"কালের চক্র"


আমার অপ্রশস্ত ঘরের ছোট্ট জানালার পাশে
দুর্গন্ধ যুক্ত শহুরে ড্রেনের ধারে -
আমার মধ্যবিত্ত, ধর্মভীরু মনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে
একটি নিম গাছ দিব্যি বেড়ে উঠেছে।

আমার অবাক বিস্ময় দেখে মিটি মিটি হাসির ঝলক দেয় সে।
আমি দেখছি – তার কৈশোর, তার যৌবন
আমি দেখছি- তার প্রসব কাহিনি, তার নতুন রূপ
আশ্চর্য স্ব-মহিমায় সে ভাস্বর!

চক্রাকারে তার যৌবন ফিরে আসে বারবার ...
গ্রীষ্মের খরতপ্ত মৃদু উষ্ণ বাতাসে তার সরু কচি পাতাগুলো
ঝির ঝির কাপন তুলে চারপাশে;
ছোট ছোট স্বর্ণ-হলুদ ফুলগুলোর যৌবন আয়োজনে
চারদিক হতে ছুটে আসে যত প্রেমিক-ভ্রমরের দল!

আমি অবাক হয়ে এইসব দেখতাম।
বছরের পর বছর আমি আমার মধ্যবিত্তের শিকল
না ছিড়তে পেরে বারবার সে উত্থান-পতন কাহিনি দেখি।
আমার নিরানন্দ উৎসবহীন জীবনে
এই একটি নিমগাছ তার একই কাহিনি নিয়ে
প্রতিবার উপস্থাপিত হয়!

কিন্তু প্রতিবার আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে,
সেই একই বিস্ময়ে আমি আবিভূত হয়ে পড়ি -
তার কচি পাতা, কচি ফুল, কচি ফল
সব কিছুর মাঝে বিশ্বপ্রকৃতির এক আশ্চর্য
নতুন নতুন সুর আমি খুজে পাই প্রতি ক্ষণে ক্ষণে!

দিনে দিনে সে সৌন্দর্যের পসরা বাড়িয়ে চলেছে
পূর্ণ যৌবনবতী নারীর বেশে কুটিল হাসি হেসে সে কটাক্ষ করে!
আর আমি সময় নামক অদৃশ্য বাঁধনে
জড়িয়ে ধীরে ধীরে শুষ্ক হয়ে যাই।
আমার চামড়া গুলো, আমার চুল গুলো তাদের যৌবন হারিয়ে
রসহীন হয়ে পরে থাকে!

মস্তিষ্কের স্মৃতির পাতায় পাতায় ধূলোর আস্তরণ গুলো
আরো বেশি পুরু হয়ে যায়!
জানালার লোহার শিকগুলোয় মরিচা গ্রাস করে নেয়
যেমন আমায় ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দিচ্ছে সময়।

মরিচে পড়া জানালার শিক গলে আমার চোখ যায়
নিম গাছটির উপর!
কেশহীন নারীর মতো সেও আজি শুষ্ক
শীতের অহংকারে তার ডালগুলো আজ নগ্ন।

হিম শীতল বাতাসে সে যেন নুয়ে পড়েছে
কোন এক পুরোহিতের দুর্বোদ্ধ ধর্মবাণী শুনে।
কিন্তু আমি জানি তার এ আত্মসমর্পণ বেশি দিনের নয়
আবার সে যৌবনবতী হয়ে মগ্ন হবে প্রকৃতি লীলায়
বসন্তের ভেলায় আবার সে উড়াবে তার বিজয় কেতন।

ষোড়শী মেয়ের উন্মাদনাময় উচ্ছল হাসির মতো
তার কচি পাতা গুলো আবার অণুরিত হবে ডালে ডালে।

কিন্তু আমার চামড়া গুলো ততদিনে আরো ঝুলে যাবে
যেন কোন পরিত্যক্ত মাকড়শার জাল দেওয়ালে ঝুলে আছে
সময়ের নিষ্ঠুর গ্রাসের খাবার হয়ে
আমি হারিয়ে যাব কালের চিরায়ত গহ্বরে!

আমার মরচে ধরা জানালার শিকগুলো
এক সময় ঝুর ঝুর হয়ে মিলিয়ে যাবে পলকা বাতাসে
কিন্তু তখনো- সেই নিম গাছটি আবারো অমরাবতী হবে!
তার প্রতিটি কোষে কোষে আবারো যৌবন পরিস্ফুটিত হবে
আবারো চারিদিক হতে ছুটে আসবে প্রেমিক ভ্রমরের দল!


০৫-০৬-১৩/পাবনা

আমার প্রিয় কিছু...

  • রবি ঠাকুরঃ- চোখের বালি, শেষের কবিতা, যোগাযোগ, গোরা, মালঞ্চ, বউ ঠাকুরানীর হাট, রাজর্ষি, নৌকাডুবি, ঘরে-বাইরে, চতুরঙ্গ, দুই বোন, চার অধ্যায়, প্রজাপ্রতির নিবন্ধ, সোনার তরী, গল্প গুচ্ছ সমগ্র, এবং গীতবিতান সমগ্র । - রবীন্দ্রনাথে আমি মনের অব্যক্ত কথা গুলো খুঁজে পাই । রবীন্দ্রনাথ আমাকে প্রশান্তি এনে দেয়, তাঁর গান কবিতা আমার মননে , আমার চিন্তায় বিল্পব ঘটায় । আমার চিত্তের কাছে আবেদন জানায় ।
  • বই- পথের পাচালি, অশনি সংকেত, প্রথম আলো-১,২, সেই সময়, পার্থিব, উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ, মেমসাহেব, ময়ূরাক্ষী, জোছনা ও জননীর গল্প, বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়, ন হন্যতে, লা নুই বেঙলি , দেবদাস, পরিণীতা, পল্লি সমাজ, বামুনের মেয়ে, চিত্রনাথ
  • চলচিত্র- অশনি সংকেত, অরণ্যের দিবারাত্রি, মেমসাহেব, টেলিভিশন, মনের মানুষ