রবিবার, ৭ জুন, ২০১৫

স্বাধীনতার দ্বিতীয় বীজঃ ছয় দফা দাবী

০.
আজকের দিনটি সম্পর্কে কিছু বলার আগে একটা মজার গল্প বলে নিই । ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছয় দফা দাবি পেশ করার পর রাজনৈতিক মহলে ঝড় উঠলো । শুধু রাজনৈতিক মহলেই না জনগণের মধ্যেও রব রব পড়ে গেলো । তাঁর উপরে আবার বঙ্গবন্ধু এবং তাজউদ্দীন বাহিনী দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন আর ছয় দফা দাবিগুলো ব্যাখ্যা করছেন ।

স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং তৎকালীন বৈদেশিক মন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো মুজিব বাহিনীকে জেলে পুরার আগে একটু ভাব নিতে চাইলেন । বুদ্ধিটা ভুট্টো সাহেবের । আইয়ুব খাসি এই বিষয়ে নাখোস । তিনি থ্রিলার একশন মানুষ । তাঁর কাজ মার মার কাট কাট !! তো ভূট্টো সাহেব যিনি কিনা অক্সফোর্ডের তুখোড় ছাত্র ছিলেন । তুখোর ছাত্র এবং প্যাচ রাজনীতির প্রবক্তা হলেও বাঙালি সম্পর্কে তাঁর ধারণা যে দুগ্ধ শিশুদের ন্যায় ছিলো তা আমরা শেষ পর্যন্ত দেখছি ! যাই হোক , ছয় দফাকে অসার ও অযৌক্তিক প্রমাণ করার জন্য শেখ সাহেবকে ঢাকার পল্টন ময়দানের জনসভায় তর্কযুদ্ধের আহ্বান জানালেন তিনি ! আবাল কি গাছে ধরে ! আবালগুলা পাকিস্থানে জন্মে !

ভালো কথা শেখ সাহেব তো রাজী । ব্যাটাকে এবার জবাব দেওয়া যাবে ! সাংবাদিকরা ছুটলেন ১৫ নম্বর পুরানা পল্টনে, আওয়ামী লীগ অফিসে ! বিশাল ব্যাপার তর্ক যুদ্ধ তাও আবার ভূট্টো সাহেবের সাথে শেখ সাহেবের ! কর্মে মগ্ন তাজউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বললেন যে সময় হলে শেখ সাহেবের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ সম্পর্কে জানানো হবে।

শেখ সাহেব চেলেঞ্জ গ্রহন করলেন । এই খবর আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে এবং এর যৌক্তিকতা অভেদ্য নিশ্চিত করে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে তাজউদ্দীন আহমেদ গেলেন ভূট্টো সাহেবের সাথে দেখা করতে । তো ভূট্টো আসলেই চালাক মানুষ ছিলেন । তিনি তাঁর সমবয়সী তাজউদ্দিনের আহমেদের কাছে এই ছয় দফা দাবির সব কিছু শুনলেন । এর যৌক্তিকতা গুলো ব্যাখা করে তাজউদ্দিন আহমেদ ভালো করে তাঁর জিলাপীর প্যাচ মাথায় ঢুকিয়ে দিলেন । এবং তিনি বুঝলেন, তাঁর সাথে এটাও বুঝলেন এই বিষয়ে শেখ সাহেবের সাথে তর্ক করা আর জেনেশুনে নিজের বুকে নিজে ছুরি ঢুকিয়ে দেওয়া হলো এক কথা !! সেই সময় তাজউদ্দীন আহমেদ সম্পর্কে তিনি মুসলিম লীগের নেতাদের কাছে মন্তব্য করেছিলেন, “হি ইজ ভেরি থরো। শেখের যোগ্য লেফটেন্যান্ট আছে দেখছি।”

সে যাই হোক । তর্কযুদ্ধের দিন পল্টনের জনসভায় যোগদানের জন্য যখন বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষের সমাগম হতে শুরু করেছে ঠিক সেদিন সকালবেলাতেই ভুট্টো তার বিজ্ঞ উপদেষ্টার দলসহ চুপিসারে ঢাকা ত্যাগ করলেন। ঢাকার একটি কাগজ শিরোনাম দিল “ভুট্টোর পলায়ন”। এবং এটাই তাঁর শেষ পলায়ন নয় ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি আরেকবার পালালেন !! সত্যের পলায়ন কখনো হয় না, মিথ্যারা বরাবরই পালিয়ে বেড়ায় !!
(সূত্রঃ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি’ এ অমর গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী, ‘একজন বিস্মৃত নেতার স্মৃতিকথা’। ঢাকা। যায় যায় দিন, ১১ জুন ১৯৮৫)


১.
আজ ঐতিহাসিক ৭ জুন । কেন এই দিন ঐতিহাসিক ? কি হয়েছিলো এই দিনে ? আমরা অনেকেই হয়তো জানি না অনেকেই হয়তো জানি । আজ এমন একটি দিন যেদিন স্বাধীনতার দ্বিতীয় বীজটি বপন করা হয়েছিলো । স্বাধীনতার প্রথম বীজটি বাঙালি বুনেছিলো ১৯৫২ সালে । সেটিই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রথম ধাপ । মূল ঘটনা কিন্তু এখানে নয় । মূল ঘটনা ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে । যা পাকিস্থান সৃষ্টির সনদ নামেও পরিচিত । লাহোর প্রস্তাবের তৃতীয় প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিলো -
"নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সুচিন্তিত অভিমত এরূপ যে, ভারতে কোন শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনা কার্যকর হবে না যদি তা নিম্নবর্ণিত মূলনীতির উপর ভিত্তি করে রচিত না হয়: (ক) ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী সংলগ্ন বা সন্নিহিত স্থানসমূহকে 'অঞ্চল' হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে, (খ) প্রয়োজন অনুযায়ী সীমানা পরিবর্ত করে এমনভাবে গঠন করতে হবে যেখানে ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান এলাকাগুলো 'স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ'(Independent States) গঠন করতে পারে, (গ) 'স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের' সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাষ্ট্র বা প্রদেশসমূহ হবে স্বায়ত্বশাসিত ও সার্বভৌম।"
এখানে কিন্তু স্পষ্ট ভাষায় এবং জোর দিয়ে বলা হয়েছে "পূর্বাঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান এলাকাগুলো 'স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ'(Independent States) গঠন করতে পারে" ।
কিন্তু ১৯৪৭ সালে যে ভিত্তির উপর পাকিস্থান সৃষ্টি হলো, সেই ভিত্তি কী শাসক শ্রেণি মনে রেখেছিলো ? তারা যে তা মনে রাখেনি শুধু তাই নয় ! নতুন নতুন ডেফিনেশন আর চক্রান্ত আর ভয়ংকর খেলায় তারা মেতে উঠেছিলো । একটি জাতিকে কিভাবে এবং কত ভাবে শোষণ শাসন করা যায় তা তারা দেখিয়েছিলো !!


২.
পরবর্তী ঘটনা ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাস । বসন্তকাল । চারদিক নতুন পাতা ফুলের আগমনে বাংলা সুশোভিত । বসন্তের হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে বুনো ফুলের সুবাস । কিন্তু বাঙালির হৃদয় তখন বসন্ত বিলাসে মত্ত নয় । পরাধীনতার শিকলে তারা জর্জরিত । তাদের আশা দেখানোর কেউ নাই ভরসা দেওয়ারও কেউ নাই । ঠিক এমনি এক বসন্তের দিনে তৎকালীন ধানমণ্ডির ৭৫১ সাতমসজিদ রোডের বাড়ির সামনের অফিস ঘরে বসে এক ব্যক্তি নিবিষ্টমনে লিখে চলেছেন। তাঁর মুক্তোর মতো হাতের লেখনিতে নির্মিত হচ্ছে একটি জাতির পথনির্দেশনা। একটি পরাধীন জাতির স্বাধিকারের সনদ। কি লিখেছিলেন সেদিন তিনি, কিভাবে একটি পরাধীন জাতিকে নতুন করে বাচার স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন তিনি । তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । রাজনৈতিক মতাদর্শ একেক জনের একেক রকম থাকতে পারে কিন্তু কয়েকটি বিষয়ে আমাদের সত্যকে অস্বীকার করার জো নেই । কারণ একে অস্বীকার করলে বাংলাদেশকেই অস্বীকার করা হয়, নিজেকে অস্বীকার করা হয় । সেদিনের ফাগুন হাওয়ায় বসে তিনি লিখছিলেন -

"একটি রাষ্ট্রের উন্নতি, অগ্রগতি, সংহতি ও নিরাপত্তা নির্ভর করে উহার আভ্যন্তরীণ শক্তির উপর। সেই শক্তির উৎস সন্তুষ্ট জনচিত্ত। আঠারো বছর পূর্বে পাকিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। আজও ইহার রাষ্ট্রীয় কাঠামো গণসমর্থনের মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়াইতে পারে নাই। পাকিস্তানের মূল ভিত্তি ১৯৪০ সালের যে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব পাকিস্তান অর্জনের জন্য মানুষকে অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল পরবর্তীকালে ঐ মূল ভিত্তি হইতে বিচ্যুতিই এই অবস্থার আসল কারণ।"

উনারা শুধু রাজনীতিই করতেন না । রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করতেন । দেশ জনগন নিয়ে ভাবতেন । এবং তাদের প্রতিটি সিদ্ধান্তের পিছনে থাকতো একেকটি সদূরপ্রসারী পরিকল্পনা । হায় !! বড় আফসোসের কথা আজকের রাজনীতিবিদদের মাঝে এমন আর কই !! রাজনীতির ময়দানের অনেকেই হয়তো জানেন না যে আজ দিনটি কেন গুরুত্বপূর্ণ । আজ পত্রিকাগুলোতেও এ সম্পর্কে কিছু দেখলাম না । জাতি হিশেবে আমরা কতটা অকৃতঙ্গ যে নিজের ইতিহাস নিজেই ভুলতে বসেছি ।

যাই হোক সে অন্য কথা ! সেই বসন্তেই রচিত হলো বাঙালির মুক্তির সনদ নামে খ্যাত ৬ দফা দাবী । আমাদের দাবী । অন্যায়ের বিরুদ্ধের দাবি, বাচার দাবী । দুইপৃষ্ঠাব্যাপী ছয় দফা দাবিনামার মুখবন্ধ লিখছেন ছয় দফার অন্যতম রূপকার পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ। পরবর্তী পাতায় ছয় দফা কর্মসূচি পেশ করেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। ওই একই বছর তাজউদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক ও শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি নির্বাচিত হন। এ দুই তরুণ নেতৃত্বর চিন্তা ও চেতনার মিলনের ফলেই আওয়ামী লীগ সেদিন হতে পেরেছিল জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সার্থক রাজনৈতিক সংগঠন।



৩.
অনেকেই হয়রতো ভাবছেন ৭ জুন ছয় দফা দাবি পেশ করা হয় ! আসলে কিন্তু তা নয় । ছয়দফা দাবী প্রথম পেশ করা হয় ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারী লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে । এবং এটি পেশ করেন শেখ মুজিবর রহমান । সেদিন অনেকেই চমকে উঠেছিলেন কিন্তু সেই তো চমকে উঠার শুরু ।

সেই সময় চলছিলো সামরিক শাসক আইয়ুব শাহীর শাসন । তিনি কঠোর শাসক । তিনি সেনাবাহিনীর জাঁদরেল লোক । শেখ সাহেবের এইসব দুষ্টামিতে তিনি ভীত হয়ে পড়লেন ! ফলশ্রতিতে ৮ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, জহুর আহমেদ চৌধুরী, রাজশাহীর মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, নূরউল ইসলাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ও পরবর্তীতে আরও নেতা ও কর্মীকে কারাবন্দী করা হলো । শুরু হলো জুলুমের আরেক অধ্যায় । কিন্তু মজার ব্যাপার হলো ততদিনে শেখ সাহেব সারা দেশ চষে বেড়িয়েছেন ছয় দফা দাবীর প্রতিটি দাবী ব্যাখ্যা করে জনগণকে বুঝিয়েছেন । এবং তারা বুঝেছিলো । দীর্ঘদিনের শোষন শাসনের ইশতেহার দেখে হৃদয়ে চাপা আগুনের গোলা নিয়ে তারা অপেক্ষা করেছিলো ।

সেই সময় তাজউদ্দীন আহমেদের স্ত্রী জেলখানায় উনার সাথে দেখা করতে গিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন- যে উনারা এখন জেলপ্রকোষ্ঠে, তাহলে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কী হবে?
তাজউদ্দীন তাঁর স্বভাবজাত স্মিত হাসি দিয়ে বলেছিলেন উনারা ভেতরে থাকলেও বাইরে রেখে গেছেন এমন এক শক্তিশালী সংগঠন যা আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।

হলও তাই । ৭ জুন ! আইয়ুব খাসির ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে, নির্যাতন, নিষ্পেষণ উপেক্ষা করে দেশব্যাপী ছয় দফা দাবিতে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষ্‌ক, মজুরসহ আপামর জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত আন্দোলন গড়ে উঠলো । ৫২'র মতো আরেকবার এদেশের মানুষের বুকে গুলি চালানো হলো । শ্রমিকনেতা মনু মিয়াসহ এগারো শহীদের রক্তে রঞ্জিত ৭ জুন অমরত্ব লাভ করল। ৭ জুন স্বীকৃতি অর্জন করল বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফার দিবস রূপে !


৪.
ছয় দফার মধ্যদিয়ে বাঙালি এগিয়ে গেলে আরেকধাপ । এগিয়ে গেলো স্বাধীনতার দিকে । যদিও যেতে হয়েছে বহু রক্তের উপর দিয়ে, শত কন্নার মধ্যে দিয়ে । সেখানে শুধু দুঃখই ছিলো, ছিলো না পাওয়ার হাহাকার, পরাধীনতার শিকল ছেড়ার যে শক্তি সেদিন জেগে উঠেছিলো তাঁর অবসান হয়েছে ১৯৭১ সালের ডিসম্বরে এসে ।

আজকের স্বাধীন বাংলাদেশে বসে সেই সময় অনুধাবন করা বা পরাধীনতার স্বাদ বুঝা কঠিন । কিন্তু সেই বোধটুকু অন্তত সেই বোধটুকুও যদি আমাদের মাঝে কাজ করতো তাহলে আজকের এই হাহকারের বাংলাদেশ আমাদের দেখতে হতো না ! আজ প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষ মারা হচ্ছে, চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মারা হচ্ছে । দিনে দুপুরে রাত বিরাতে ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে যুবতী মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে । সবচেয়ে মজার এবং দুঃখের কথা হলো এগুলোর একটিরও বিচার হচ্ছে না । কি অদৃশ্য হাত এসবের বিচার থেকে সরকারকে গুটিয়ে রেখেছে তা খোলসা করতে হবে । একটি অপরাধের বিচার না হওয়া মানে তারচেয়ে ভয়ংকর অপরাধে অপরাধীকে উৎসাহিত করা । এবং একটি রাষ্ট্যের কাছে যা কখনোই কাম্য নয় ।

কিছু বলা মানেই সরকার বিরোধী এই ধারণা আমাদের রাজনীতির একটা স্লোগানে পরিণত হয়েছে । আপনি পা চাটেন হাত চাটেন আপনি মস্ত রাজনীতিবিদ । ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে রাজনীতির প্রতিটা সেক্টরে এখন চাপাবাজ তেলবাজ তাবেদারদের দৌরাত্ম !! বঙ্গবন্ধু নিজে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে নিজের এবং নিজ দলের সমালোচনা করেছিলেন । আজ এমন নেতা নেত্রী কোথায় ?

চিরকুমার কবি হেলাল হাফিজের ভাষায় আক্ষেপ করে বলতে হয় -

“স্বাধীনতা সব খেলো,
মানুষের দুঃখ খেলো না ।”

রবিবার, ৩ মে, ২০১৫

" তোমার রাক্ষুসে মুখের আহার অনির্ণেয় মানুষের মৃত্যুর সমাহার "




বহুদিন যাবত কিছু অস্থিরতা নিয়ে বসবাস করছি
কিছু না বলতে পারার হাহাকার
আবার কিছু বলতে পারার ভয়
কিছু মিথ্যা, কিছু সত্য, কিছু প্রেম এবং কিছু অভিনয়  
সব আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে ফেলার এক নির্দয় চক্রান্তে মেতে উঠছে।

তাই এই সমাবেশে –
ভদ্রমহোদয় এবং ভদ্রমহোদয়াদের সামনে কিছু পেশ করছি;
কেউ হয়তো শুনছেন না
অনেকে কানে দেশলাইকাঠি ঢুকিয়ে পরামান্দ লাভ করছেন
তাই বলে আমি বলবো না, তা তো হয় না
নেতা-নেত্রীদের মতো প্রতিদিন এমন সুযোগ আমার তো আর হবে না;     
তাই কিছু বলি ।

বলি সেই অতীতের কথা
যখন সে এলো তখন সে সব খেয়ে এলো
টনকে টন তাজা রক্ত খেলো
মায়ের শুকিয়ে যাওয়া বুকের দুধ খেলো
অভুক্ত শিশুর কান্না খেলো
প্রেমিক-প্রেমিকার প্রথম প্রণয়ের প্রথম স্পর্শ খেলো
প্রেম-ভক্তি-সততা সু-রাজনীতি সব খেলো !
অতঃপর এলো, নিরাকার ছেড়ে আকার হয়ে এলো
কিন্তু ততদিনে তার অভুক্ত পেট ধীরে ধীরে বিশাল হয়েছে
যেন দীর্ঘ ক্ষুধিত মন্বন্তর থেকে উঠে আসা এক মস্ত রাক্ষুস !

সেই থেকে তার খাওয়া শুরু
রমনায় সে কিছু খেলো কিছু ছিন্নভিন্ন করে দিলো
রাতের আধো-আধারে সত্য কিছু মুখকে সে
কুপিয়ে কুপিয়ে তাদের থলথলে রক্ত মিশ্রিত মাংস খেলো
রাস্তায় রাস্তায় নারীদের বস্ত্র খেয়ে মহাভারতের
খলনায়ক হওয়ার পরম গৌরবে গৌরবান্বিত হয়ে
তৃপ্তির ঢেকুরের আওয়াজটা বেশ মিষ্টি করে বাজালো সে;

আজ এতদিন পরও তার ক্ষুধা তৃষ্ণা মেটে না
আজও সে রক্ত খায়, আজও সে মালাউনদের ভিটেমাটি খায়
পাশের বাড়ির পাচুর মায়ের অনুর্বর বুকে ক্ষত সৃষ্টি করে
তার বয়ষ্ক ভাতাটা কিংবা তার সোমত্ত মেয়েটার যোনিপথটা সে খায়
রসিয়ে রসিয়ে লালা ঝরিয়ে ঝরিয়ে খায় ।  
আজও সে তোমার আমার বাংলা গান-কবিতা খায়
মায়ের সুখগুলো খায়, বলতে যাওয়া কথাগুলো খায়
অবশেষে তোমাকে ভালোবাসি এই কথাটুকুও সে খায় ।

হে স্বাধীনতা,
তোমার রাক্ষুসে মুখের আহার অনির্ণেয় মানুষের মৃত্যুর সমাহার ।  
তুমি ফিরিয়ে নাও তোমার সবকিছু
আমাকে ফিরিয়ে দাও সেইসব আদিম দিন, যেইসব আদিম দিনে-
স্বাধীনতা নামক শব্দটার সৃষ্টির  প্রয়োজনই হয়নি ।


অফটপিকঃ

“আর ক্ষমতার রঙে রঙ্গিন চশমা পড়ে কিছু নারী-পুরুষ নিশ্চুপ থাকে-  
নিঃশ্চুপ থাকে তাদের নারীত্ব, নিঃশ্চুপ থাকে তাদের পুরুষত্ব !
নিঃশ্চুপ থাকে তাদের মমত্ব, নিঃশ্চুপ থাকে তাদের মানবতা   
তারা মানব শ্রেণির লিঙ্গ বিচারে চতুর্থ পর্যায়ের, বুঝলেন কিনা ? তারা রাজনীতিবিদ !”   

বুধবার, ২১ মে, ২০১৪

" শুদ্ধ প্রেম "




মস্তিষ্কের হাজারো নিউরনে চাপ প্রয়োগ করে
স্বপ্ন দেখেতে শিখেছি
আর সেই স্বপ্নে ভর দিয়ে হাঁটা শিখেছি ; 

কিন্তু ভালোবাসতে পারিনি, প্রেমে পড়তে পারিনি -
না জননীকে, না কোন আবেদনময়ী রমনীকে  
কিংবা কোন আদিম ধর্মকে !

কিন্তু তারপরও প্রেম চাই একটিবার
চাই শুদ্ধ প্রেম !

পাবনাঃ ২১-০৫-১৪

শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪

" আসমান " By.... রাজন কবির


কাশ তুমি-
ট পাথরের এই শহরে
রিক্ত সকল হৃদয় মাঝে
ম্র নীলের আবরণে
গলে রাখো সযতনে
মিষ্টি মধুর মায়ায় বুনে ।

তোমার কাঁদন ঝরায় বৃষ্টি
মাতিয়ে তোলে সকল সৃষ্টি!
কেমনে হাসো সূর্যের হাসি ?

ভালোবাসি, বড্ড ভালোবাসি।
লোভ নেই, চাইনা তোমায়
বাসবো ভালো, বেসো না আমায়
সিক্ত চোখে এটুকু চাওয়াই !

বুধবার, ১৪ মে, ২০১৪

" আদম ইচ্ছার অপমৃত্যু "



বসন্তে যে প্রেম পাখিটি বহু বছরের
বহু বন্ধুর পথ বেয়ে এসেছিলো -
চৈত্রের তীক্ষ্ণ দাবদাহের প্রতাপে
সে তার শুভ্র ডানার পালক গুলো
পুড়িয়ে ফেললো !

আর বৈশাখী রাতের দোর্দণ্ডপ্রতাপ
মাতাল ঝড়ে পড়ে
সে হয়ে গেলো বিধ্বস্ত-ধ্বংস।

হায় ! তাকে খুঁজে পাওয়ার মতো
আর একটি পালকও আর পড়ে রইলো না
আদম মাটিতে !
..........................................................


পাবনাঃ ২১-০৪-১৪

বুধবার, ৭ মে, ২০১৪

" একাকীত্ব "


 

নির্জন ঘরে নোনাধরা দেয়ালের
ভেজা ভ্যাঁপসা শীতল অন্ধকার কোণে
নিজেকে লুকিয়ে রাখি ।

কিছু অব্যক্ত কথা কুরে কুরে খায়
কিছু অমোচনীয় অঙ্কুরিত পাপ বটবৃক্ষের রূপ নেয় ; 
মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরন ধীরে ধীরে
অন্ধকারে ডুবে যেতে থাকে -

শুধু সামনে মরিচা পড়া খোলা জানালায়
শেষ অগ্রহায়ণের শীত সকালের এক চিলতে
ঝাপসা আলো আলতো করে উকি দিয়ে যায় ! 


                                                                                                     পাবনা-২৭/১২/১৩

"বিপ্রতীপ"



ভালোবসার দেহ আজি ভালোবাসায় পুড়ে
ছাই হয়ে তবু তারা তোমার পিছু ছোটে
স্বপ্নহীন হৃদয়ে আজো স্বপ্ন ভীর করে
বিপ্রতীপ কোণে আজো তোমায় আশা করে ।

তোমার চোখে তোমার মুখে
তোমার নাকের ভাজে
স্বপ্ন গুলো খেলতো সেদিন আমার প্রকাশ হয়ে !

আজ তুমি মিথ্যে হয়ে মিথ্যা খেলায় মাতো
আলেয়া হয়ে আলোর কারসাজি ভালোই রপ্ত করো
স্বপ্ন আমার স্বপ্ন সে তো; হায় রে –
স্বপ্ন আমার স্বপ্ন সে তো
ধূলি হয়ে রেসের মাঠে উড়ে !

পাবনা -০৫-০৫-১৪-

শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

" চুমু যে আর চাচ্ছি না "



১.
তোমায় নিয়ে ভাবনা আমার
যত শত যাতনা
চুমুর উপরে এবার
কিছু একটা হোক না !
২.
কত নেতা-কেতা মিলে
করলো হরিলুট
আমার বেলায় তুমি শুধু
চুপ রে চুপ রে চুপ !...
৩.
সেতু হলো সেতু গেলো
কত শত কথা হলো
কত জনে উপরে উঠলো
আমার বেলায় তুমি শুধু আহা-উঁহু কেন করো !
৪.
তোমার লাল ঠোঁটের চুমুর জন্য
হাজার কোটি খানেক টাকার অস্ত্র এলো
আর আমার চাকরির বায়োডাটা-খানি
বাতিল ফাইলে চলে গেলো !
৫.
তোমার বাঁক-নেওয়া কোমর যখন
দেখে পাড়ার মাস্তান-টোকাইয়ে
তুমি তখন বাকা ঠোঁটে হাসি মারো টেনে -
শুধু আমার বেলায় অসভ্য-ইতর গালি ছুড়ে দেও কেমনে !
৬.
থাকবো না আর এই ভবে
যাবো অচিন দেশে
তোমার কাছে পাওনা চুমুর খাতাখানি
খুলবো রোজ কেয়ামতে !


                                                                                                                                               ১৪-০৯-১৩ । পাবনা । 

বুধবার, ১০ জুলাই, ২০১৩

আমার শহর



পোড় খাওয়া এই শহরে
ছুটে চলা অবিরত
হাজারো মুখের পাশে মুখ লাগানো
তবু যেন ভুলা যায় দম না ফেলতেই !   

শুধু ভুলা যায় না -
শহরের ক্লান্ত দুপুর গুলো
রাস্তার ধারে কোনো প্রাচীন
ভাঙা ইটের দেয়াল আর তাঁর পাশে
ছন্নছাড়া ভাবে গজিয়ে উঠা
কিছু লতা গুল্মের অবিরত চেষ্টা
সবুজের সমারোহে ডুবিয়ে দিব শহর ।

চারিদিকের হাহকার বাড়ছে, বাড়ছে মনের বিষাদ
বিষাক্ত ফনা নগ্নভাবে উন্মোচিত করে
ফেলা হচ্ছে আজি এই শহরের আনাচে কানাচে ।  
কি নিষ্ঠুর ভাবে একদিকে সে নিজেকে করছে অমরাবতী -
আবার অন্য দিকে স্ব’যত্নে খোলা রেখেছে বিষকুম্ভের পুরোনো ঢুলী !  

চারিদিকের সব কিছু এক অমোঘ আকর্ষণে
ছুটে চলেছে তাঁর দিকে !
যেন এই শহরের শুভ্র নীলার মাঝে ক্ষণিকের তরে
হারিয়ে যাওয়া আর স্বর্গে অবগাহন করা নয় ভিন্ন কথা !

যদিও স্বর্গ শব্দটা আজকাল সেকেলে এবং নিন্দিত !
ছন্নছাড়া, বাউন্ডুলে প্রাচীন এই শহরে আজি
প্রেমের বড় অভাব !
শহুরে বিষাক্ত সীসার প্রলেপ জড়ানো -
এই হৃদয়ের তল খুঁজে পাওয়া যায় না কিছুতেই !  

                            
                                                                                                      ১০/০৭/১৬/পাবনা

আমার প্রিয় কিছু...

  • রবি ঠাকুরঃ- চোখের বালি, শেষের কবিতা, যোগাযোগ, গোরা, মালঞ্চ, বউ ঠাকুরানীর হাট, রাজর্ষি, নৌকাডুবি, ঘরে-বাইরে, চতুরঙ্গ, দুই বোন, চার অধ্যায়, প্রজাপ্রতির নিবন্ধ, সোনার তরী, গল্প গুচ্ছ সমগ্র, এবং গীতবিতান সমগ্র । - রবীন্দ্রনাথে আমি মনের অব্যক্ত কথা গুলো খুঁজে পাই । রবীন্দ্রনাথ আমাকে প্রশান্তি এনে দেয়, তাঁর গান কবিতা আমার মননে , আমার চিন্তায় বিল্পব ঘটায় । আমার চিত্তের কাছে আবেদন জানায় ।
  • বই- পথের পাচালি, অশনি সংকেত, প্রথম আলো-১,২, সেই সময়, পার্থিব, উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ, মেমসাহেব, ময়ূরাক্ষী, জোছনা ও জননীর গল্প, বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়, ন হন্যতে, লা নুই বেঙলি , দেবদাস, পরিণীতা, পল্লি সমাজ, বামুনের মেয়ে, চিত্রনাথ
  • চলচিত্র- অশনি সংকেত, অরণ্যের দিবারাত্রি, মেমসাহেব, টেলিভিশন, মনের মানুষ